ওসমান গনি,স্টাফ রিপোর্টার
মুন্সীগঞ্জে এক কৃষকসহ বিএনপির সহযোগী সংগঠনের ১৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।এছাড়াও গ্রেফতারে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
একজন কৃষককে গ্রেফতারের পরে ১৫ হাজার টাকা দাবি করে ৫৪ ধারায় দেয়ার জন্য সেক্ষেত্রে কৃষকের স্বজনরা টাকা দিতে না পারায় বিস্ফোরক আইনে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগীর পরিবার।রবিবার(৪ ডিসেম্বর)বিস্ফোরক,গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ।এর আগে শনিবার দিবাগত রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত থানা-পুলিশ জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি তারিকুজ্জামান বলেন,মোহন মিয়ার নামে কোন মামলা ছিল না।তাকে শহরে কলেজ এলাকায় বিষ্ফোরণ,গাড়ি ভাঙচুরের মামলা সন্ধিগ্ধ ভাবে গ্রেফতার করা হয়।৫৪ ধারায় মামলা দেয়ার বিষয়ে কথা বলে কেউ টাকা চেয়ে থাকলে সেটা প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।শনিবার সন্ধ্যায় দিকে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা এলাকার চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলেন কৃষক মোহন মিয়া (৫০)।সেখান থেকে তাকে আটক করে থানা পুলিশ। রবিবার বিস্ফোক,গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালত পাঠায় পুলিশ।চাচাকে জামিনে বের করতে মুন্সীগঞ্জ আদালতে ছুটে যায় মাহফুজা আক্তার।
মাহফুজা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন,তার চাচার বিরুদ্ধে এর আগে কোনো মামলা ছিল না।তিনি রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত না।কৃষি কাজ করে সংসার চালান।যেখান থেকে তাকে ধরে আনা হয় প্রতিদিন তিনি সেখানে বসেই চা খেতেন।থানা পুলিশকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করে ছিলাম তারা ছাড়েনি।মোহন মিয়ার এক ভাগিনা সাংবাদিকদের বলেন, মামাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পরে,রাতেই তারা থানায় যান।সেখানে পুলিশের এক কর্মকর্তার সাথে মামাকে ছাড়ানোর বিষয়ে কথা বলেন। পুলিশ জানায়,ছাড়া যাবে না। তবে ১৫ হাজার টাকা দিলে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হবে।সেই টাকা না দেওয়ায় তাকে বিস্ফোরক মামলায় আসামী করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মধ্যে গজারিয়া উপজেলা মৎস্যবীজী দলের জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম, লৌহজং উপজেলার খিদিরপারা ইউনিয়ন কৃষকদলের সভাপতি মো:জাহাঙ্গীর হোসেন,টংঙ্গীবাড়ী উপজেলার আউটশাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো:রফিক শিকদার,যশলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ তালুকদারকে গ্রেফতার করা হয়।এছাড়া মুন্সীগঞ্জ সদর থানা এলাকা থেকে দু`জন মিরকাদিম বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান বকুল, আলমগীর,শ্রীনগর থানা এলাকা থেকে পাঁচজন এবং সিরাজদিখান,গজারিয়া থানা এলাকা থেকে একজন করে গ্রেফতার করা হয়।বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান,ককটেল বিস্ফোরণ,ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে গত কয়েকদিনে জেলার ৬টি উপজেলায় প্রশাসন ও আওয়ামীলীগ নাটক সাজিয়ে পাঁচ শ`থেকে ছয় শ` বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।এর আগেও বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ ও আওয়ামীলীগ মামলা করে।১০ ডিসেম্বরে রাজধানীর গণসমাবেশে নেতাকর্মীরা যেন যেতে না পারে এজন্য এসব মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে।বাড়ি বাড়ি অভিযান চালান হচ্ছে।ভয়ে সাধারণ মানুষও আতঙ্কে রয়েছে।গ্রেফতার এড়াতে দলীয় নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছেন।অনেককে আবার গ্রেফতারো করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও দলটির জেলার সাবেক সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, আওয়ামীলীগ ও পুলিশ যত মামলা করুক।বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করুক। কোনোভাবেই গণসমাবেশে যাওয়াকে আটকাতে পারবে না। যেভাবে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে,গ্রেফতার করা হচ্ছে,এগুলোর নিন্দনীয় কাজ।আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সাথে পুলিশের অভিযান, গ্রেফতার এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
গ্রেফতার প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব সাংবাদিকদের জানান, যারা বিশৃঙ্খলা ও নাশকতামুলক কাজ করে বিভিন্ন থানা এলাকার পরিবেশ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ শুধু তাদেরই গ্রেফতার করছে। এ পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিটি থানায় বিস্ফোরক,ভাঙচুরের মামলা রয়েছে নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলবে। এ অভিযানের সাধারণ মানুষের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে আটক ও তার নাম মামলায় আনা হলে তদন্ত সাপেক্ষে মামলা থেকে বাদ দেয়া হবে।যত জায়গায় সিসি ক্যামেরা রয়েছে সেই সকল সিসি ক্যামেরার ফুটেজও নজরদারিতে রয়েছে।নাশকতা করে কেউ রক্ষা পাবে না। অন্যদিকে কৃষক মোহন মিয়ার পরিবারকে এসপি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।
Leave a Reply