গাইবান্ধায় অনলাইন ও অফলাইন পোশাক জগতে সবার থেকে পরিচিত মুখ তাসলিমা আজম লিজা ও সবার পরিচিত ব্র্যান্ড ‘ ফাতিহা হ্যান্ডিক্রাফট ‘
শূন্য থেকে শুরু করে অভিজ্ঞতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা,পরিশ্রম এবং নেতৃত্বের গুণে আজ তিনি সফল এক উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠিত তাঁর ব্র্যান্ড।
ডিজাইনার তাসলিমা আজম লিজা মুলত ২০১৭ সালে অনলাইন বিজনেস শুরু করেন। বাবা একজন সেনাবাহিনী কর্মকর্তা ও মা গৃহিনী।স্বামী ও বড় বিজনেস এর সাথে জড়িত।উনি উদ্যোক্তা হয়েছেন বিবাহিত জীবনে, একজন বিবাহিত মেয়ের জন্য জীবন সঙ্গীর সাপোর্ট বেশি প্রয়োজন, যেটা উনার হাজব্যান্ড করেছেন।লিজা গাইবান্ধা থেকে ডিগ্রি শেষ করেছেন।
‘ ফাতিহা হ্যান্ডিক্রাফট ’ এর স্বত্ত্বাধিকারী তাসলিমা আজম লিজা বলেন, ফ্যাশনেবল উদ্যোক্তাদের জন্য হস্তশিল্প আবেগকে ক্যারিয়ারে পরিণত করার একটি দুর্দান্ত উপায়।ফাতিহা হ্যান্ডিক্রাফট এর প্রধান হল হস্তশিল্প ব্যবসা। এর লক্ষ্য ফ্যাশন সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং গ্রাহকদের সন্তুষ্টির জন্য নতুন নতুন ডিজাইন গ্রহণ করা।
প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালে অনলাইনে যাত্রা শুরু করে। ফ্যাশন এবং পোশাক জ্ঞান তাঁকে বাস্তব জীবনে ডিজাইন সেন্স বাস্তবায়নে অনেক সাহায্য করেছে।
এক বছরের মধ্যে ‘ ফাতিহা হ্যান্ডিক্রাফট ’ এর অনলাইন প্রতিক্রিয়া এতটাই সন্তোষজনক ছিল যে, ২০১৮ সালেই কারখানা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হল। ওই কারখানায় ৫ জন ডিজাইনার ও ৯৫ জন কর্মী এক ছাঁদের নিচে কাজ করেন।
৫ বছর ধরে চলা কারখানায় ফুলটাইম ও পার্টটাইম মিলে বর্তমানে এভারেজ প্রায় ২৫০ জন কর্মী কাজ করছেন। বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ১২ লাখ যদিও উদ্যোক্তা যখন শুরু করেছিলেন তখন তার প্রাথমিক বিনিয়োগ ছিল মাত্র বিশ হাজার টাকা।
তাসলিমা আজম লিজা বলেন,
”আমার ব্যবসায়িক নীতি ছিল কাস্টমারদের কাছ থেকে প্রি-অর্ডার ভিত্তিতে ৫০ শতাংশ অগ্রিম নেওয়া। তারপর ম্যাটেরিয়াল কিনে তাদের পছন্দের পোশাক তৈরি করা।এটা আমার বড় সাফল্য যে স্বল্প বিনিয়োগে আমি একটি হ্যান্ডিক্রাফট ব্যবসা চালাতে সক্ষম হয়েছি।
লিজা গাইবান্ধার অনলাইন বিজনেস গ্রুপ গুলোতে ও সময় দিয়ে থাকেন।গাইবান্ধা অনলাইন মার্কেট গ্রুপ ও উই গ্রুপে কাজ করে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন।লিজার মতে, গাইবান্ধা অনলাইন মার্কেট গ্রুপ নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য একটি দুর্দান্ত প্ল্যাটফর্ম।
অনলাইনে অনেক কাস্টমারের সাথে দেখা হয়, এবং এটি পরিচিতি তৈরি করার একটি দুর্দান্ত সুযোগ যা ব্যবসার সীমানা বাড়ানোর জন্য অত্যান্ত প্রয়োজন। এ সব কিছু নিয়ে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে ফাতিহা হ্যান্ডিক্রাফট এর জন্য বিসিক,জেলা প্রশাসন,গাইবান্ধা অনলাইন মার্কেট গ্রুপ সহ ১০ টির বেশি পুরস্কার অর্জন করেছেন তাসলিমা আজম লিজা।
তাঁর প্রতিষ্ঠানে সাধারণত হাতের করা পোশাক নিয়ে কাজ।
শাড়ি, থ্রি পিচ, পাঞ্জাবি, নকশী কাথা, বেড শিট, পিচ্চিদের ড্রেস ইত্যাদি। ম্যাচিং ফ্যামিলি কম্ব টা বেশ জনপ্রিয় ।
বিভিন্ন আকর্ষণীয় পণ্য তৈরি হয়। অনলাইন ও অফলাইনে বাংলাদেশেের পাশাপাশি তার ডিজাইন করা ড্রেস বিক্রি হয় আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, কানাডা,ভারত, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে।তাঁর ফাতিহা হ্যান্ডিক্রাফট’ ব্রান্ড এর শো-রুম গাইবান্ধার নতুন ব্রিজ রোডে অবস্থিত।
তাসলিমা আজম লিজা বলেন, ‘সাফল্য পেতে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বিদ্যমান এবং সম্ভাব্য প্রতিযোগীদের। সাফল্য পেতে আমি অনন্য ডিজাইন তৈরিতে আরও মনোযোগী হই। ক্রমাগত উন্নতির সাথে সাথে ফ্যাশন সচেতনতা তৈরি হয়েছে।’
ভবিষ্যতের উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে আরও বড় জায়গায় দেখতে চান লিজা। নিজের সৃজনশীলতা, সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে ‘ ফাতিহা হ্যান্ডিক্রাফট ’ ব্র্যান্ডকে দেশের অন্যতম বড় কর্মসংস্থানের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান।তিনি তাঁর ব্রান্ডকে আড়ং এর মত শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
তরুন উদ্যোক্তাদের নিয়ে উনার পরামর্শ , তরুণ উদ্যোক্তাদের আর্থিক বিষয়ে পুরোপুরি জ্ঞান রাখতে হবে।
এক বার না পারিলে বার বার চেষ্টা করে যেতে হবে। জীবনে অনেক বাঁধা বিপত্তি আসবে। তাই বলে নিরাশ হওয়া যাবে না। চাকরি হচ্ছে না বলে বেকার বসে না থেকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা বেশ ভাল। পরিশ্রম করলে জীবনে সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ।
খবর সম্পর্কে মন্তব্য করুন