ইমরান হোসাইন (বিশেষ প্রতিবেদক)
দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ১ম দফায় তৃতীয় হওয়া সিনান ওয়ান নি:সন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। তার ৫% ভোট জয়-পরাজয়ে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এখন পর্যন্ত তিনি কাউকেউ সাপোর্ট দেননি বরং দরকষাকষি চলছে।
গতকাল বিকেলে এরদোয়ানের সাথে সিনান ওয়ানের আকস্মিক বৈঠক হয়েছে। এর আগে দুপুরে সিনান ওয়ান যে জোটের হয়ে লড়ছিল (আতা জোট) সেই জোটের প্রধান উমিত ওজদাহ মিটিং করে বিরোধী জোটের প্রার্থী কেমাল কিলিচদারুলুর সাথে। যদিও সকালেই এরদোয়ান বলেছিলেন যে সিনান ওনানের সাথে তার মিটিং হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে দুপুরের মিটিংয়ের পর বিকেলেরটা ছিল আকস্মিক। মিটিংয়ের পর কোন পক্ষই স্পষ্ট কিছু বলেনি যে সিনান কাকে সমর্থন করছেন। আজকে সিনানের জোটের মিটিংয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার পর একটা সিদ্ধান্তে আসার সম্ভাবনা আছে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সিনান যে প্রার্থীকেই সমর্থক দিক না কেনো ভোটের পুরোটা সেই প্রার্থীর হিসেবে যোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারন, সিনান ওয়ানের ভোটপ্রাপ্তি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে সে অধিকাংশ ভোট পেয়েছে এরদোয়ানের ভোটব্যাংক খ্যাত এলাকাগুলো থেকে। যেমন: কায়সেরী, কোনিয়ার মতো মধ্য আনাতলিয়ার জেলাগুলো থেকে। এসব জেলা থেকে সে ৭-৮% ভোট পেয়েছে। এ ভোটগুলো আদর্শিকভাবে ডানপন্থী ভোট এবং সিএইচপির মতো একটি বাম দলের প্রার্থীকে দেওয়ার সম্ভাবনা একদমই নেই। হয়তো তারা এরদোয়ানকে ভোট দিবে নয়তো ভোট কেন্দ্রেই যাবেনা। আবার সিনানের বেশকিছু ভোট আছে সিএইচপি থেকে আসা বিশেষত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা মোহাররেম ইনজের ভোট। এ ভোটগুলো এরদোয়ানের হিসেবে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।
সিনানের ভোটের হিসাব নিয়ে তিনটি দৃশ্য সামনে আসতে পারে:
১. কাউকেই সমর্থন না দিয়ে দুই পক্ষের সাথেই সমান যোগাযোগ রাখা অথবা চুপ থাকা। এরকমটা হলে তার ৫% ভোটের ৩% যাবে এরদোয়ানের দিকে আর বাকী ২% পাবে কিলিচদারুলু। আর নির্বাচনের পর তাকে এরদোয়ানের ক্যবিনেটে দেখা যেতে পারে।
২. কেমাল কিলিচদারুলুকে সমর্থন দেওয়া। এক্ষেত্রে ৫% থেকে ২.৫-৩% যাবে কেমালের দিকে আর বাকী ২-২.৫% পাবে এরদোয়ান। এরকমটা হলেও এরদোয়ান বিজয়ী হবেন। তার পাওনার খাতায় কিছুই থাকবেনা। তবে যদি সারপ্রাইজ কিছু হয়ে যায় এবং কিলিচদারুলু প্রেসিডেন্ট হতে পারে তবে তার ভাইস প্রসিডেন্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকবে।
৩. যদি এরদোয়ানকে সমর্থন করে তবে তার ভোটের ৩.০০-৩.৫% এরদোয়ানের দিকে যেতে পারে। এক্ষেত্রেও তাকে এরদোয়ানের ক্যবিনেটে দেখা যেতে পারে। সম্ভবত, এরদোয়ান তার ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব গ্রহন করেনি।
তবে দ্বিতীয় দফায় প্রার্থীরা বিশেষত বিরোধী দলের প্রার্থী সিনানের ভোটগুলো পাওয়ার জন্য নতুন করে পিকেকে এবং উদ্ভাস্তুদের প্রশ্নে কট্টোর জাতীয়তাবাদের প্রচার শুরু করেছে। যেখানে নির্বাচনের আগে তাদের প্রচারনার রুপটা ভিন্নরকমের ছিল, তারা কুর্দি ভোট টানার জন্য পিকেকের নেতা ওজালান এবং সালাউদ্দিন দেমিরতাসের মুক্তির স্লোগান দিয়েছিল। উল্লেখ্য, এ দুজন এখন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে পৃষ্টপোষকতার অভিযোগে কারাগারে রয়েছে। স্বভাবতই বিরোধী দল এখন এসব বিষয়ে নতুন করে ভিন্ন কোনো প্রচারনা তুললে ১ম দফায় তার মোটের প্রায় ১০% এর মতো কুর্দি ভোট কমে যাবে।
সবমিলে সিনান ওয়ান এরদোয়ানকে সমর্থন দিলে অথবা কাউকেই সমর্থন না দিলে তার প্রাপ্তির খাতায় কিছু যোগ হতে পারতো। তবে এখানে সরকারী জোটের পক্ষ থেকেও কিছু জটিলতা আছে। কারন জোটের অন্যতম গুরুত্পূর্ণ দল এমএইচপি তার ব্যাপারে ইতিবাচক নয়। কেননা, সিনান ওয়ান একসময় এমএইচপিরই এমপি ছিল পরবর্তীতে দলের হাই কমান্ডের সাথে তিক্ততা এবং মামলা-মোকাদ্দমা করে দল থেকে বহিস্কৃত হয়েছে। স্বভাবতই এমএইচপি চাইবেনা যে, সিনান ওয়ান জোটে আসুক আর এরদোয়ান তাকে ভাইস প্রসিডেন্ট কিংবা মন্ত্রী বানাক।
লেখক : একাডেমিশিয়ান, তুরস্ক
খবর সম্পর্কে মন্তব্য করুন