‘পোশাক ধর্ষণের একমাত্র কারণ নয়’; এই ইস্যুতে আলাপ তোলা এই মুহূর্তে অবান্তর। এটা তো আপনি আমি সকলেই জানি। বরং ‘পোশাক ধর্ষণের একমাত্র কারণ নয়’; ইস্যুটিকে সামনে এনে ‘পোশাকও ধর্ষণের অন্যতম কারণ’; ইস্যুটিকে ধামাচাপা দেওয়ার আয়োজন করবেন না।
জেনে রাখুন, এটি মুক্তমনাদের একটি পরিকল্পিত এজেন্ডা। এর বিরুদ্ধে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। এই লড়াইয়ে অবান্তর কোনো ইস্যুতে আলাপ তুলে বাগড়া দেওয়ার চেষ্টা করবেন না প্লিজ। ‘পোশাকও ধর্ষণের অন্যতম কারণ’; এই আলোচনাটিকে কেন আমরা এখন হাইলাইট করছি, সেটা না বোঝার মতো বেকুব তো আপনি না!
ধর্ষণের পিছনে আরো অনেকগুলো বিষয় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে; কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এখন সুনির্দিষ্টভাবে আলাপ উঠেছে পোশাক নিয়ে। প্রগতিশীল মুক্তমনারা নগ্নতাকে রাষ্ট্র থেকে স্বীকৃতি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এতে তাদের ফায়দা আছে কিন্তু আমাদের জন্য মস্ত বড়ো অশনীসংকেত!
তারা যুক্তি দেখাচ্ছে—‘পোশাক ধর্ষণের কারণ হলে শিশুরা তো ধর্ষিত হবার কথা ছিল না!’ আমরাও যুক্তি দিয়ে বলার চেষ্টা করেছি—কীভাবে পোশাক পরোক্ষভাবে শিশু এবং অসহায় নারীদের ধর্ষণে ধর্ষককে প্রভাবিত করে, কীভাবে উদোর পিন্ডির কাঁধে গিয়ে চাপে।
অর্থাৎ, অপরাধী যাকে দেখে ধর্ষণে প্রলুব্ধ হয়, তাকে সচরাচর কাছে পায় না। ফলে তার এই অপরাধকর্মটি সে এমন কারো সঙ্গে ঘটায়, যাকে সহজেই নির্জনে পেয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের দুষ্কর্মের বলী হয় কোনো নিরীহ শিশু কিংবা অবলা নারী। সংক্ষিপ্ত পোশাক ঠিক এভাবে ধর্ষণে ভূমিকা রাখে।
এর মানে কিছুতেই এই নয়—আমরা ধর্ষক পুরুষটির এখানে কোনো দোষ দিচ্ছি না, সব দোষ নারীর পোশাকের ওপর দিয়ে পার পাবার চেষ্টা করছি। বিষয়টি মোটেই এমন নয়। ধরুন, নদীর মাঝখানে একটি নৌকা রাখা আছে। নৌকাটির নিচের ছিদ্র দিয়ে পানি উঠছে অবিরাম। সেই মুহূর্তে আমরা কী করব? কেবলই কি পানি ছেঁচব?
নিশ্চয় পানি ছেঁচার সাথে সাথে ছিদ্র বন্ধ করারও উদ্যোগ নিতে হবে। ঠিক তেমনি, ধর্ষণের জন্য ধর্ষককে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পাশাপাশি এটির কারণ হিসেবে এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্রগুলোও বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে। নৌকাটিকে বাঁচানোর জন্য শুধু পানি ছেঁচাই যেমন যথেষ্ট নয়, তেমনি ধর্ষণ বন্ধে কেবল ধর্ষককে শাস্তি দেওয়াই নয় একমাত্র সমাধান।
কাজেই এই আলাপে ধর্ষণের অন্যান্য কারণ নিয়ে কথা বলা প্রাসঙ্গিক নয়। প্রাসঙ্গিক নয় ধর্ষকের শাস্তি নিয়ে কথা বলাও। কারণ, ধর্ষণের এই কারণগুলি সম্পর্কে আমরা সম্যক অবগত। প্রকাশ্য দিবালোকের মতো সত্য এগুলো। বক্ষমান বিতর্কে এই প্রসঙ্গ না তুললেই তা মিথ্যে হয়ে যাবে না। যুগের পর যুগ ধরে এগুলোর বিরুদ্ধেই কথা বলে আসছি আমরা।
এখন পোশাকের স্বাধীনতার নামে ধর্ষণের আরেকটি অনুসঙ্গকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে তারা। এ কারণেই এ ব্যাপারে চারদিক থেকে আওয়াজ ওঠা জরুরি। আর এই আওয়াজ তোলার সময় ধর্ষণের পূর্বতন বারংবার উত্থাপিত কারণগুলো নিয়ে আলাপ অবান্তর। আশাকরি, এটুকু বোঝার মতো বুদ্ধিমত্তা আপনার আছে। আপনি মাথামোটাদের অন্তর্ভুক্ত নন।
আশার দিক হলো—আমাদের প্রজন্ম প্রগতিবাদীদের এই অন্যায় আবদারকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। পোশাক স্বাধীনতার নামে তাদের এই বেহায়াপনাকে প্রশ্রয় দেয়নি তারা। তাদের এসকল কর্মকাণ্ডকে তারা হাস্যরসাত্মক হিসেবে গ্রহণ করেছে। অজস্র ট্রল হচ্ছে তাদের সেই গুটিকতক আন্দোলনকারীকে ঘিরে। এই প্রজন্ম তাদের মস্তিষ্ক আর বিবেক বিকিয়ে দেয়নি।
তরুণ প্রজন্মই আমাদের শক্তি, আমাদের মূল অনুপ্রেরণার জায়গা। তাদের নেতৃত্বেই গড়ে উঠবে আগামীর বাংলাদেশ। এই প্রজন্মকে সঠিক পথে চালিত করতে পারলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব এখনও। কারণ, তাদের একটি বড়ো অংশই ইসলামকে ভালোবাসে। মুক্তমনারা পারেনি তাদের বোকা বানাতে। তারা শক্ত হাতে হাল ধরলে পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
Leave a Reply