ওসমান গনি স্টাফ রিপোর্টার
মুন্সীগঞ্জের র্টঙ্গীবাড়ীতে ভাঙনকবলিত এলাকায় তালতলা-ডহরী খালের দুই পাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।তবে এর সঙ্গে জড়িত এ চক্রের সদস্যদের দাবি, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে এমন নৈরাজ্য।কিন্তু উপজেলা প্রশাসন বলছে ভিন্ন কথা।গতকাল উপজেলার আউটশাহী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ভাঙনকবলিত কাইচাইল এলাকায় ঘুরে দেখা গিয়েছে,বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই ভাঙন দেখা দেয়ায় বিলীন হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের বসতবাড়ি,ফসলি জমিসহ গাছপালা।চলতি বছর তালতলা-ডহরী খালের ভাঙনে প্রায় ১৫ টিরও বেশি বসতবাড়ি ও বিস্তীর্ণ কৃষিজমি খালে বিলীন হয়েছে।ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ইউনিয়নটির কয়েকটি গ্রামের শতাধিক বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
এ অবস্থায় ভাঙনকবলিত এলাকার দুই পাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা,যা ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোর কাছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ,তালতলা-ডহরী খালের বিভিন্ন পয়েন্টে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করেছে একটি প্রভাবশালী মহল।প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বালিবোঝাই বাল্কহেড চলাচলের কারণে স্রোতের প্রভাবে বেড়েছে ভাঙনের তীব্রতা।ফলে বসতভিটা রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মনির হোসেন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান,তালতলা-ডহরী খালে বাল্কহেড চলাচলের বিষয়ে একাধিকবার লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানিয়েছেন।তবু এসব বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। ফলে নতুন করে দেখা দিয়েছে ভাঙন।খালের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ইমরান খান,মোতালেব ব্যাপারী, শাহ আলম,আলমগীর,জসিম ব্যাপারী,আবু তাহের ব্যাপারী, সানাউল্লাহ ব্যাপারী,বারেক শেখ,খালেক শেখ,আব্দুল মালেক শেখ,হাসমত আলী ব্যাপারী ও জাহাঙ্গীর খানসহ অনেকে জানান,চলতি অক্টোবরের শুরু থেকেই বেড়েছে ভাঙনের তীব্রতা। প্রতিদিনই একটু একটু করে বিলীন হচ্ছে গাছপালা ও বসতবাড়ি।ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হয়নি। এছাড়া ভাঙনকবলিত বিভিন্ন মানুষের বসতবাড়ির মাটি জোর করে কেটে নিচ্ছে ওই চক্রের সদস্যরা।তালতলা ডহরী খালের দুই পাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।সরোজমিনে দেখা যায়,ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে মাটি কেটে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তুলছেন শ্রমিকরা।তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৫-২০ হাজার টাকায় প্রতিটি ট্রলারে করে নিয়ে যাওয়া মাটি বিক্রি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জাজিরা এলাকার বিভিন্ন ইটভাটায়।
মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত চক্রের অন্যতম সদস্য জাহাঙ্গীর শেখ দাবি করেন,প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে এমন কার্যক্রম। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শুরুতে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুজ্জামান।তিনি বলেন, ভাঙনের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে একটি লিখিত আবেদন পেলেও মাটি কাটার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাননি।তবে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ঘটনাস্থলে তাত্ক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার(ভূমি)ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা আফরিন।বিষয়টি খতিয়ে দেখে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মাটিকাটা চক্রের অন্যতম সদস্য জাহাঙ্গীর শেখকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এর আওতায় ৫০ হাজার জরিমানা করেন।ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ না করার জন্য তার কাছ থেকে মুচলেকাও নেয়া হয়েছে।
খবর সম্পর্কে মন্তব্য করুন