লালমনিরহাটে অটোচালক সুলতান মিয়া হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ,মুল আসামী গ্রেফতার সহ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও ছিনতাই হওয়া ব্যাটারী চালিত অটো উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টায় লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ কর্তৃক এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেস ব্রিফিং এ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লালমনিরহাট জেলা নবাগত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) মারুফা জামাল, কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এটিএম গোলাম রসুলসহ লালমনিরহাট জেলার কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ ব্রিফিং এ জানা যায়, গত ৬/৯/২০২২খ্রি.সকাল ৬.৩০ঘটিকায় জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর সংবাদের ভিত্তিতে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ জানতে পারে, কালীগঞ্জ থানাধীন পশ্চিম ইশোরকোল সাকিনস্থ ইশোরকোল হাই স্কুল সংলগ্ন তিস্তা নদীর শাখা ক্যানেলের পাড়ে পানিতে একজন অজ্ঞাত নামা পুরুষ গলাকাটা মৃত দেহ পড়ে আছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে তাৎক্ষনিক কালীগঞ্জ থানার অফিসার ও ফোর্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভিকটিম সুলতান মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও তার পরিহিত স্যান্ডেল উদ্ধার করেন। এরপর ভিকটিমের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে মৃত ব্যক্তির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে নাম ঠিকানা ও পরিচয় নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে তার পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে ভিকটিমকে সনাক্ত করে। ভিকটিম সুলতান মিয়ার পিতা মোঃ আব্দুল গফুর (৭০) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তি দের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় এজাহার দায়ের করেন। কালীগঞ্জ থানার মামলা নং-১১ তারিখ ৬/৯/২০২২ইং ধারা ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করে মামলার তদন্তভার জনাব মোঃ হাবিবুর রহমান পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত), কালীগঞ্জ থানা, লালমনিরহাট এর উপর অর্পণ করেন। কালীগঞ্জ থানা পুলিশ ক্লু-লেস হত্যাকান্ডের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ সুপারের দিক নির্দেশনা ও সার্বক্ষনিক মনিটরিং মামলাটি তদন্ত শুরু করে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে র্যাবের সহায়তায় মামলার ঘটনার সহিত সরাসরি জড়িত আসামী ১। মোঃ সুজন চৌধুরী (৪০)পিতাঃ মৃত বাবুল চৌধুরী,মাতা মৃত সুরাইয়া চৌধুরী গ্রাম-আশরতপুর ঈদগী পাড়া, থানা-তাজহাট আরপিএমসি রংপুরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। অতঃপর উক্ত আসামীর তথ্য মতে অপর আসামী মোঃ মমিনুর ইসলাম (২০), পিতা-নজরুল ইসলাম, মাতা- মোছাঃ মনোয়ারা বেগম, সাং-কাকিনা তেলীপাড়া (১নং ওয়ার্ড, কাকিনা ইউপি),থানা-কলীগঞ্জ লালমনিরহাটকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে,গত ৭/৮ মাস পূর্বে আসামী মোঃ মমিনুর ইসলাম এর সাথে আসামী মোঃ সুজন চৌধুরীর রংপুর পার্কের মোড়স্থ দোকানে চা খেতে এলে তার সাথে পরিচয় হয় । গত ০২/০৯/২০২২খ্রি. বিকাল বেলা আসামী মমিনুর চা খেতে সুজন চৌধুরীর দোকানে আসে, মমিনুরর স্ত্রী গর্ভবতী থাকার কারণে হাতে টাকা পয়সা না থাকায় টাকার জন্য একটা অটো ছিনতাই করার প্রস্তাব সূজন কে দেন। সুজন চৌধুরী মমিনুর কে একটা অটো রিক্সা (মিশুক ভাড়া করে দেওয়ার কথা বলে। সেই মোতাবেক গত ৫ সেপ্টম্বর সকাল ১০টার পর আসামী সুজন এর ব্যবহৃত মোবাইল থেকে তার পূর্ব পরিচিত অটো চালক ভিকটিম সুলতান মিয়াকে ফোন দেয়। বিকাল অনুমান ৪.৩০ ঘটিকার সময় আসামী মমিনুর রংপুর পার্কের মোড়ে আসামী সুজনের দোকানে আসে । সেখানে তারা একটা অটো রিক্স (মিশুক) ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। আসামী সুজন অটো ভাড়া করার দায়িত্ব নেয় এবং আসামী মমিনুরকে অজ্ঞান করার মেডিসিন সংগ্রহ করতে বলে। বিকাল ০৫ ঘটিকায় পূনরায় আসামী সুজন এর মোবাইল থেকে অটো চলক ভিকটিম সুলতানের মোবাইলে ৩ (তিন) বার ফোন করে, আসামী সুজন তাকে তার অটো রিক্সাটি নিয়ে রংপুর বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে আসতে বলে। এরপর আসামী সুজন চৌধুরী অপর আসামী মমিনুরকে ফোন দেয় এবং তাকে অজ্ঞানের মেডিসিন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে আসতে বলে। তৎপ্রেক্ষিতে ঘটনার দিন রাত অনুমান ৮/৯.ঘটিকার মধ্যে সুজন চৌধুরী তার দোকান রংপুর পার্কের মোড় থেকে ০১ টি ধারালো চাকু নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে আসে,রাত ১০:১৫ মিনিট নাগাদ আসামী মমিনুর ও ভিকটিম সুলতানের সাথে আসামী সুজন চৌধুরীর দেখা হয়। আসামী সুজন চৌধুরী ও মমিনুর সুলতানের অটোতে চড়ে গঙ্গাচড়া মহিপুর ব্রিজের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে সুজন চৌধুরী আসামী মমিনুরকে জিনসেন নামীয় সিরাপটি দিলে সে তার মধ্যে ২.৫ এমজি মাত্রার দুটি ঘুমের ট্যাবলেট কৌশলে সিরাপের মধ্যে মিশিয়ে দেয়। মহিপুর ব্রিজ পার হয়ে ব্রিজের সামনে সেক্সের ঔষধের কথা বলে অটো চালক সুলতানকে জিনসেন সিরাপ খাওয়ানো হয়। এরপর আসামী সুজন চৌধুরী ও মমিনুর ভিকটিম সুলতানের অটো গাড়ীতে কাকিনা কামার পাড়া পোনা মার্কেটে যায়। সেখানে ভিকটিম সুলতান ঘুমের ঔষধের প্রভাবে টালমাটাল হলে আসামী মমিনুর অটো চালকের সিটের পাশে বসে ভিকটিম সুলতান মিয়ার এক হাতে ধরে রেখে অন্য হাতে অটো চালিয়ে রাত অনুমান ১১টার পরে কালীগঞ্জের ইশোর কোল গ্রামের তার বোনের বাড়ির সামনে নিয়ে যায়। আসামী সুজন চৌধুরী ভিকটিম সুলতানকে ধরে অটো থেকে নামিয়ে একটু পাশে যায়। আসামী মমিনুল অটো চার্জ কম থাকায় তার বোন জামাই মোসলেমকে তার বাড়ী থেকে ডেকে তুলে অটো রিক্সাটি তার বাড়িতে রাখে, এরপর আসামী মমিনুর অপর আসামী সুজন চৌধুরী কাছে আসে। আসামী সুজন চৌধুরী ও মমিনুর ভিকটিম সুলতানকে ধরাধরি করে ইশোরকোল হাই স্কুলের সামনে ক্যানেলের কাছে নিয়ে যায়। পরে দুজনের পরামর্শ মতে প্রথমে তাকে ফেলে রেখে যেতে চায়। কিন্তু পরক্ষণেই ভিকটিম সুলতান মিয়ার জ্ঞান ফিরলে আসামী সুজন চৌধুরীর নামে অভিযোগ করতে পারে ভেবে সুজন চৌধুরীর সাথে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে তার গলা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে তার গলা কেটে ধাক্কা মেরে তাকে ক্যানেলে ফেলে দেয় এবং তার হাতের চাকুটি পাশের ধান ক্ষেতে ফেলে দেয়।
খবর সম্পর্কে মন্তব্য করুন