লেবানন রাষ্ট্র এবং এর সেন্ট্রাল ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। এরকম সংবাদ শুনলে প্রথমেই আমাদের মাথায় যে প্রশ্নটা আসে, তা হচ্ছে – একটা রাষ্ট্র কীভাবে দেউলিয়া হয়? এবং একটা রাষ্ট্র দেউলিয়া হয়ে গেলে তার জনগণের ভাগ্যে কী ঘটে? (লেখাটা কিঞ্চিত দীর্ঘ। আপনি চাইলে ভিডিও দেখতে পারেন। লিংক কমেন্টে।)
প্রথমে আমরা আলোচনা করব দেউলিয়া হওয়া অর্থ কী? একজন মানুষ বা একটা কোম্পানি কীভাবে দেউলিয়া হয়?
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি অনেক বেশি ঋণ করে ফেলে, এবং সে যদি বুঝতে পারে সেই ঋণ তার পক্ষে আর কখনোই শোধ করা সম্ভব হবে না, তখন সে কোর্টের কাছে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণার জন্য আবেদন করতে পারে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের আইন আছে। কিন্তু বেসিক ধারণাটা একই রকম।
ধরেন আপনি বিভিন্ন ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান এবং ক্রেডিট কার্ড থেকে এক কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসায় বিশাল লস খেয়ে গেলেন। বারবার চেষ্টা করেও ব্যবসা দাঁড় করাতে পারলেন না। ওদিকে সময় যত যাচ্ছে, আপনার ঋণের উপর সুদও তত বাড়ছে। তো এরকম অবস্থায় আপনি কী করবেন? আজীবন তো আপনি এভাবে চলতে পারবেন না। তখন আপনি চাইলে কোর্টে গিয়ে বলতে পারবেন, বা অ্যাকচুয়ালি বিভিন্ন ফর্ম ফিলাপ করে আবেদন করতে পারবেন যে – আমার বর্তমান ফাইন্যানশিয়াল অবস্থা এরকম, এবং এই অবস্থায় আমার পক্ষে এই ঋণ কোনোভাবেই শোধ করা সম্ভব না। আমি নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে চাই।কোর্ট আপনার সাবমিট করা ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করে দেখবে, এবং যদি তারা কনভিন্সড হয়, তাহলে আপনাকে দেউলিয়া ঘোষণা করবে।
এখন কথা হচ্ছে, এই দেউলিয়া ঘোষণা করার অর্থ কী? এর অর্থ হচ্ছে, কোর্ট রায় দিবে, আপনি নিস্ব, এবং আপনার পক্ষে ঋণ শোধ করা সম্ভব না। ফলে আপনার যে ১ কোটি টাকা ঋণ ছিল, সেটা এবং তার সুদ, সব মাফ হয়ে যাবে।
কিন্তু এর বিনিময়ে কোর্ট আপনার জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সম্পত্তি বাদে যত আয়েশী সম্পদ আছে, সেগুলো বাজেয়াপ্ত করে পাওনাদারদেরকে বুঝিয়ে দিবে। সেই সাথে কোর্ট একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে দিবে। ঐ সময়সীমা পর্যন্ত আপনি যে চাকরি করবেন, তার বেতনের একটা অংশও কোর্ট পাওনাদারদের হাতে তুলে দিবে।
এছাড়াও দেউলিয়া হলে আপনি আরও কিছু নাগরিক অধিকার এবং সামাজিক সুযোগ-সুবিধাও হারাবেন। আপনাকে বাকি জীবন, বা অ্যাটলিস্ট বেশ কয়েক বছর খুবই স্বল্প বাজেটে জীবন যাপন করতে হবে। কিন্তু বিনিময়ে যে বিশাল ঋণের বোঝা আপনার মাথার উপর চেপে ছিল, সেটা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন।
এবার আলোচনা করা যাক একটা রাষ্ট্র কীভাবে দেউলিয়া হয়?
খেয়াল করুন, একটা দেশ চালানোর জন্য টাকা লাগে। সেই টাকা আসতে পারে দেশের জাতীয় সম্পদ থেকে। অথবা জনগণের উপর ধার্য করা ট্যাক্স থেকে। কিন্তু রাষ্ট্রের ব্যয় যদি আয়ের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন? তখন তাকেও ঋণ নিতে হয়। এই ঋণ হতে পারে সেন্ট্রাল ব্যাংক বা কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে, অথবা হতে পারে সরাসরি জনগণের কাছ থেকে বন্ডের মাধ্যমে, অথবা হতে পারে অন্য কোনো রাষ্ট্র বা বহুজাতিক সংস্থার কাছ থেকে। এখন যদি সরকারের অর্থনৈতিক পলিসি খুবই খারাপ হয়, যদি দুর্নীতি আকাশ ছোঁয়া হয়, অথবা অন্য কোনো কারণে যদি এরকম হয় যে সরকারের পক্ষে সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ঋণ শোধ করা সম্ভব না হয়, তখন বলা হয়, সেই সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে।
এই দেউলিয়াত্ব কিন্তু কিন্তু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়াত্বের মতো না। সে কারণে টেকনিক্যালি এটা বলা হয় না যে, অমুক কান্ট্রি হ্যাজ গন ব্যাংকরাপ্ট। বরং বলা হয় অমুক কান্ট্রি হ্যাজ ডিফল্টেড অন লোন। অর্থাৎ তারা ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে গণমাধ্যমে বা প্রচলিত বর্ণনায় এটাকেই অনেক সময় ব্যাংকরাপ্সি বা দেউলিয়াত্ব বলে উল্লেখ করা হয়।
লেবানন ঠিক কীভাবে দেউলিয়া হলো?
এবার আসা যাক লেবাননের ইতিহাসে। লেবানন হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র দেশ, যেখানে খ্রিস্টানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
লেবাননের খুব বেশি প্রাকৃতিক সম্পদ নাই। কিন্তু তারপরেও তাদের অর্থনীতি বেশ ভালোই ছিল। তাদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল ট্যুরিজম, রেমিট্যান্স, ব্যাংকিং খাত, বিদেশী সাহায্য এবং বিদেশী বিনিয়োগ। বিশেষ করে খ্রিস্টানদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে বিভিন্ন সামাজিক এবং ধর্মীয় বিধিনিষেধ না থাকার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় লেবানন ছিল ট্যুরিজম এবং অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ইউরোপ-আমেরিকানদের পছন্দের স্থান। সে সময় লেবাননের অর্থনৈতিক অবস্থা এতই স্বচ্ছল ছিল যে, লেবাননকে বলা হতো মধ্যপ্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। আর এর রাজধানী বৈরুতকে বলা হতো মধ্যপ্রাচ্যের প্যারিস।
কিন্তু এর সব কিছুই পাল্টে যায় সত্তরের দশকে শুরু হওয়া লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময়। গৃহযুদ্ধের ফলে লেবাননের ইনফ্রাস্ট্রাকচার পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। যুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠনের জন্য লেবাননকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিতে হয়। কিন্তু দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এই ঋণ তাদের পক্ষে শোধ করা সম্ভব হচ্ছিল না। দিনে দিনে এই ঋণের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে সর্বশেষ তা দেশটির জিডিপির দেড় গুণ আকার ধারণ করে। সরকারের যা আয় হয়, তার প্রায় অর্ধেকই চলে যায় ঋণের সুদ দিতে গিয়ে। ফলে অর্থনীতির অবস্থা দিনে দিনে খারাপ হতে থাকে।
গৃহযুদ্ধের আগে, সত্তরের দশকে ১ ডলার সমান ছিল ৩ লেবানিজ লিরা। কিন্তু যুদ্ধের শেষে, নব্বইয়ের দশকে সেটা পৌঁছে যায় প্রায় ১৫০০ ডলারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৯৭ সালে লেবানন লিরার মান মার্কিন ডলারের সাথে লিঙ্কড করে দেয়। তারা কৃত্রিমভাবে ১ ডলার সমান ১৫০০ লিরা – এই রেট ধরে রাখতে শুরু করে।
বাজারে লিরার দাম পড়ে গেলে তারা লিরার বিনিময়ে ফরেন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে লিরার দাম পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। এরফলে কয়েক দশক ধরে সব সময়ই লিরার মান স্থির থাকে। ফলে একদিকে লেবানিজদের লাভ হয়। তাদের আসলে যতটুকু অর্থনৈকিত সক্ষমতা, তারা তার চেয়েও ভালোভাবে জীবন যাপন করতে থাকে। তুলনামূলক স্বল্পমূল্যেেই তারা লিরার বিপরীতে ডলার কিনে সেই ডলার দিয়ে বিদেশ থেকে পণ্য আমদামি করতে থাকে।
কিন্তু ভেতরে ভেতরে এটা তাদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি করতে থাকে। এই উচ্চ মূল্যে ফিক্সড রেট ধরে রাখার একটা প্রধান ফলাফল ছিল, লেবানিজরা আর আশেপাশের দেশগুলোর মতো উৎপাদনমুখী বা রপ্তানিমুখী হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ পাচ্ছিল না। তারা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ে।
গৃহযুদ্ধের পর লেবাননের মূল আয় ছিল ট্যুরিজম, বিদেশী ঋণ, উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে সাহায্য, ব্যাংকিং খাত এবং বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স। এগুলো দিয়ে মোটামুটি ভালোই চলে যাচ্ছিল। কিন্তু ২০১১ সালের আরব বসন্ত এসে সবকিছু পাল্টে দেয়। আরব বসন্তে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন হলেও লেবানন মোটামুটি শান্ত ছিল। কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলোর অস্থিরতা, আন্দোলন এবং গৃহযুদ্ধের প্রভাব লেবাননেও এসে দোলা দেয়। যেমন সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের ফলে ১.৫ মিলিয়ন শরণার্থী লেবাননে এসে আশ্রয় নেয়, যা লেবাননের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ। ওদিকে লেবানিজ শিয়া মিলিশিয়া সংগঠন হেজবুল্লাহ যখন সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে শুরু করে, তখন উপসাগরীয় সুন্নি আরব রাষ্ট্রগুলো লেবাননের প্রতি সাহায্য বন্ধ করে দেয়।
একইসাথে ২০১৪ সালের পর থেকে তেলের দাম হ্রাস পেতে শুরু করলে লেবাননের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে শুরু করে। সে সময় প্রায় চার লাখ লেবানিজ নাগরিক তেল সমৃদ্ধ উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোতে কাজ করত। এর মধ্যে অর্ধেকই ছিল সৌদি আরবে। লেবাননের জিডিপির ১/৫ ভাগই আসত তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে। কিন্তু তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় তাদের অনেকে চাকরি হারায়, বা মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ২০১৫ সালে লেবাননের মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৬০% এসেছিল গালফ প্রবাসীদের কাছ থেকে। কিন্তু ২০১৭ সালে সেটা নেমে আসে মাত্র ৭%-এ।
পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করলে লেবাননের সেন্ট্রাল ব্যাংক – ব্যাংক ডি লিবান – ফাইন্যানশিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং করতে শুরু করে। তারা উচ্চ সুদে কমার্শিয়াল ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার ঋণ নিতে থাকে। বিনিময়ে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সেই ডলার জমা নিতে শুরু করে। কিন্তু যেহেতু সরকারের অন্য কোনো আয় ছিল না, তাই এটা ছিল মূলত এক ধরনের পঞ্জি স্কিম। মানুষ অতিরিক্ত সুদের লোভে ব্যাংকে ডলার জমা রাখতে শুরু করে। সরকার সেই ডলার কাজে লাগাতে থাকে পণ্য আমদানির জন্য, লিরার মান ধরে রাখার জন্য, এবং সেই সুদ দেওয়ার জন্য।
এরপর যখন সরকারের হাত খালি হয়ে যায়, তখন তারা আরও উচ্চসুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে শুরু করে, এবং ব্যাংকগুলোও মানুষের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ করার জন্য তাদেরকে আরও উচ্চসুদের অফার দিতে শুরু করে। পুরো ব্যাপারটা এক ধরনের চক্রের মধ্যে পড়ে যায়, যেই চক্র এক সময় ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। কিন্তু এরমধ্যেই এমন কয়েকটা ঘটনা ঘটে, যা এই পতনকে আরও ত্বরান্বিত করে।
প্রথমত, ২০১৯ সালে সরকার রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য হোয়াটসঅ্যাপ কলের উপর ট্যাক্স নির্ধারণ করে। লেবাননের দূর্নীতিবাজ পলিটিশিয়ানদের কল্যাণে সেখানে ধনীদের আয়কর খুবই কম। তাদের ট্যাক্স না বাড়িয়ে যখন হোয়াটসঅ্যাপ কলের উপর ট্যাক্স বসানো হয়, যাতে গরীবরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তখন মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে।
সে সময় পরিস্থিতি বেগতিক বুঝতে পেরে ধনী ব্যবসায়ীরা এবং ব্যাংকাররা তাদের টাকা-পয়সা বিদেশে সরিয়ে ফেলে। শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে যায়। সংকট বুঝতে পেরে সাধারণ নাগরিকরা ডলার উঠিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যাংকে ছুটে যেতে শুরু করে। কিন্তু ততদিনে ব্যাংকে আর কোনো ডলার ছিল না। ফলে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো মাসে ২০০ ডলার উত্তোলনের সীমা নির্ধারণ করে দেয়।
এ সময় থেকেই ডলারের অভাবের কারণে অফিশিয়াল রেটের সাথে ব্ল্যাক মার্কেটে ডলারের মূল্যের পার্থক্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। অফিশিয়ালি তখনও ১ ডলার সমান ১৫০০ লিরা। কিন্তু ব্ল্যাক মার্কেটে সেটা প্রথমে ১৬০০, এরপর ১৮০০ থেকে শুরু করে বাড়তে বাড়তে গত বছর ১ ডলার সমান হয়ে যায় ২৪ হাজার ডলার! সে সময় আরও দুইটা ঘটনা ঘটে। প্রথমত, কোভিড-১৯ প্যানডেমিকের কারণে লেবাননের আয়ের প্রধান উৎস ট্যুরিজম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরকম পরিস্থিতিতেই লেবানন প্রথমবারের মতো ডিফল্ট করে এবং সেই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই ২০২০ সালের আগস্টে ঘটে যায় সেই চরম বিপর্যয় – বৈরুত পোর্ট বিস্ফোরণ। লেবাননের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা এমনিতেই কঠিন ছিল। এই বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ সেটাকে প্রায় অসম্ভব করে তুলে। তারই ধারাবাহিকতায় এখন দ্বিতীয়বারের মতো লেবাননের ডিফল্ট করার কথা শোনা যাচ্ছে।
সর্বশেষ আলোচনা করা যাক একটা দেশ দেউলিয়া হলে কী ঘটে?
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হলে যেরকম সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা ঘটে, দেশের ক্ষেত্রে সাধারণত সেরকম ঘটে না। যদিও এর ব্যতিক্রমও আছে। যেমন, ২০১২ সালে আর্জেন্টিনা ডিফল্ট করার পর মার্কিন আদালতের নির্দেশে ঘানায় অবস্থিত একটি আর্জেন্টাইন নেভি ট্রেনিং শিপ বাজেয়াপ্ত করা হয়। এছাড়াও এর আগে শ্রীলঙ্কা ঋণ শোধ করতে না পারায় চীন ৯৯ বছরের জন্য তাদের একটি পোর্ট লীজ নিয়ে নেয়। এমনিতে সাধারণত কোনো দেশ দেউলিয়া হয়ে গেলে পাওনাদার রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সাথে নেগোশিয়েট করে। কখনও তারা ঋণ পরিশোধ করার সময়সীমা বৃদ্ধি করে, কখনও দাবীর কিছু অংশ ছাড় দেয়, যেটাকে হেয়ারকাট বলা হয়। যেমন, ২০১১ সালে আর্জেন্টিনা যখন ৮১ বিলিয়ন ডলার ঋণের ক্ষেত্রে ডিফল্ট করে, তখন নেগোশিয়েশনের পর তারা পাওনাদারদেরকে এক-তৃতীয়াংশ ঋণ শোধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
দেউলিয়া হওয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা হোল এটি অর্থনীতি এবং মুদ্রা ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। লেবানন ২০২০ সালে প্রথমবার ডিফল্ট করার পর যা যা ঘটেছিল, তা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, বেকারত্ব বৃদ্ধি, আমদানিসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ কমে যাওয়া, সরকারের উপর রাজনৈতিক চাপ বৃ্দ্ধি পাওয়া ইত্যাদি।
দেউলিয়া হওয়াকে কেন্দ্র করে অনেক সময়ই সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়। তাদের ক্রেডিট রেটিং কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে ওঠে, বা পেলেও তার জন্য উচ্চহারে সুদ দিতে হয়। তারপরেও বিভিন্ন খাতে খরচ কমিয়ে, অর্থনৈতিক পলিসি পুনর্নির্ধারণ করে অনেক দেশ একবার ডিফল্ট করার কিছু বছরের মধ্যে পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। এখন লেবাননও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা, সেটা নির্ভর করবে তাদের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সর্বস্তরের জনগনের সততা, প্রচেষ্টা এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর।
মূল – Mozammel Hossain Toha
সংকলন ও পরিমার্জনে – মোহাইমিন পাটোয়ারী
খবর সম্পর্কে মন্তব্য করুন