শত প্রতিকূলতার মাঝে স্বপ্ন জয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া গোমস্তাপুরের আকতারুল তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথমবর্ষের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৯২৮তম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এ’ ইউনিটে ৩২৫তম স্থান অর্জন করেন তিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের নিমইল গ্রামের সাইফুদ্দিনের ছেলে আকতারুল ইসলাম। ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। তার পিতা একজন দিনমজুর। অভাব-অনটন তাদের নিত্যসঙ্গী।
আকতারুল বলেন, অভাবের তাড়নায় আমার পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়িয়ে এবং অন্যের জমি ও আম বাগানে দিন মজুরের কাজ করে জেএসসি ও এসএসসি পাশ করেছি। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ৩ মাস যশোর গিয়ে রাজমিস্ত্রির লেবার হিসেবে কাজ করে কিছু টাকা আয় করি। পরে রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রি কলেজ এ ভর্তি হই। ওই কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ড. শাহাদৎ হোসেন, হায়দার ছাত্রাবাসে আমাকে ২ বছর থাকার ব্যবস্থা করে দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সময় এলাকায় এসে অন্যের জমিতে কাজ করে ও প্রাইভেট পড়িয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই ইমদাদুল, তুহিন মির্জা ও জনি আমাকে সহযোগিতা করে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক কেনো এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি একজন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। আমার পিতা অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে খুব কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া করিয়েছেন। আব্বার সঙ্গে আমিও দিন মজুরের কাজ করেছি। প্রতিনিয়ত জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে পড়ালেখা করেছি। আমার মা গৃহিনী হয়েও আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল ঢাকায় পড়ালেখা করার। আমার এ স্বপ্ন আল্লাহ্ পূরণ করেছেন। তাতে আমি খুব আনন্দিত। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
ছেলের এমন ভালো ফলাফল হওয়ার বিষয়ে আকতারুলের বাবা সাইফুদ্দিন বলেন, আমার ছেলেটা ছোট থেকেই খুব মেধাবী। আমি মুর্খ মানুষ। তাই অন্য সন্তানদের তেমন লেখাপড়া করাতে পারিনি। এখন শুধু স্বপ্ন দেখি আকতারুল বড় হয়ে একটা চাকরি করে সমাজের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আমি একজন দিনমজুর হয়ে গর্ববোধ করতে পারবো।’
মৃধাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আকতারুল ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির পর থেকেই তাকে মেধাবী হিসেবে দেখে আসছি। অত্যন্ত কষ্ট ও পরিশ্রম এবং জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ায় আমিসহ আমার স্কুলের শিক্ষকরা গর্বিত এবং আনন্দিত।’
আকতারুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলাফল প্রকাশের পর ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়লে সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন ও রহনপুর পৌর মেয়র তার হাতে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান হুমায়ূন রেজা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা খাতুন ও রহনপুর পৌর মেয়র মতিউর রহমান খান তার পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সে ভবিষ্যতে বিসিএস দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে ম্যাজিষ্ট্রেট হতে চাই।
সমাজের কোনো বিত্তবান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে সে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে পারবে। তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে চাইলে মোবাইল নম্বর-০১৩০৬-১১৬৪১৬। এছাড়া তার ব্যাংক হিসাব নম্বর-১২৬১০৫০২৮৪৭৭৩ ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, এলিফ্যান্ট রোড শাখা, ঢাকা।
Leave a Reply