ভুলটা যদি প্রথমবার হয়, তাহলে উচিত হবে যথাসম্ভব তা এড়িয়ে যাওয় ঘাঁটাঘাঁটি করা বা লোক সম্মুখে প্রকাশ না করা চাই। একে তার দুঃসাহস চিত্রিত করার সুযোগ দেওয়া যাবে না। বিশেষ করে শিশু যদি তা লুকোনোর ব্যাপারে খুব বেশি হতদন্ত হয়ে ওঠে, তা হলে তা এড়িয়ে চলাই সমীচীন।
.
কারণ, অল্পতেই কিছু করতে থাকলে শিশুদের দুঃসাহস বেড়ে যায়। পরবর্তীকালে সাজা হিসেবে সামনে প্রকাশ করলেও এটি তার কাছে পান্তাভাত মনে হতে থাকে।
.
একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলো— এখন আর ছাড় দেওয়া যাবে না। কিছু নিন্দা তিরস্কার তো অবশ্যই করতে হবে। তবে তা যেন হয় একান্তে; লোকজন কেউ না দেখে ফেলে। তার পর তার অপরাধের গুরুতর দিকটা মননে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
বলতে হবে— সাবধান! এই কাজ যদি আবার করেছো! এসব কাজে তোমাকে যেন আর ন দেখি। তাহলে কিন্তু লোকজন ডেকে তোমার বিচার করব।’
.
তাই বলে শাসন একটু করতে গিয়ে পচা কথা বলতেই থাকলেন—এটি আবার অনুচিত। কেননা, বেশি বললে এসব কথা কানে সওয়া হয়ে যায়। অপরাধ তার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়। অন্তরে কথার প্রভাব ফিকে হয়ে যায়। বাবা কথায় হবে সংযমী ও গুরুগ সারাক্ষণ বকবক না করে বরং মাঝে মাঝে একটি দুটি গর্জন দেবেন, তাতেই কাজ হয়ে যাবে।
.
মায়ের কাজ হলো—শিশুকে বাবার শাসনের কথা মনে করিয়ে দেবে। অন্যায় কাজ করলে মৃদু রাগডাক করবে।
.
অপরাধের সঙ্গে সঙ্গে যা বলার বলে দিতে হবে। জিইয়ে রাখা যাবে না। তবে দেখতে হবে সীমালঙ্ঘন যেন না হয়ে যায়। তার কাছে যেন জুলুম মনে না হতে থাকে। তার সম্মানবোধে যেন ক্ষত তৈরি না হয়ে যায়।
.
সীমাতিরিক্ত কঠোরতার মন্দ পরিণতির কথা তুলে ধরতে গিয়ে ইবনে খালদুন বলেন— ছাত্র, গোলাম বা খাদেম যেই হোক, তার শাসন যদি কঠোরতার আর ঝাড়িঝুড়ির ওপর দিয়েই হয়, তাহলে একপর্যায়ে সে কঠোরতার নিচে চাপা পড়ে যায়।
.
মন ছোট হয়ে যায়। হারিয়ে যায় কাজের তেজ-উদ্যম। পরিণত হয় অলসতার গ্রাসে। কখন জানি হঠাৎ করে ক্রোধের খড়্গ নামে এই ভয়ে ধীরে ধীরে মিথ্যা আর অসৎ পন্থা অবলম্বন বাধ্য হয়। উন্মুক্ত হয়ে যায় তার সামনে ধোঁকা আর প্রবঞ্চনার পথ।
.
প্যারেন্টিং এর আধুনিক পাঠশালা বই থেকে
খবর সম্পর্কে মন্তব্য করুন