মুন্সীগঞ্জে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের যোগসাজসে প্রতিপক্ষের লোকজন দারিদ্র এক মুদি দোকানীর মিউটিশন করা সম্পত্তিতে ইটের দেয়াল তুলে সীমানা প্রাচীর করে জোরপৃর্বক দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দারিদ্র এই মুদি দোকানী শওকত আলী তার নামাজারির ১৬ শতাংশ সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন,এলাকার পঞ্চায়েত কমিটি,থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ ও আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করেও এ বিষয়ে কোনো সুষ্ঠ বিচার পাচ্ছেন না। ফলে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে চরম অসহায় হয়ে পড়েছে এই ক্ষুদ্র মুদি ব্যবসায়ী।মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার উত্তর ইসলামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে সরেজমিন গতকাল মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর ইসলামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দারিদ্র মুদি দোকানী র জায়গার মধ্যে প্রতিপক্ষের লোকজন ইটের দেয়াল তুলে সীমানা প্রাচীর তুলে রেখেছে। কেটে ফেলা হয়েছে ২০/২৫টি গাছ।বাঁশ ফেলে রাখা হয়েছে ঘর তোলার কাজের জন্য।স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে তারা এ বিষয়ে ভূমিদস্যুদের ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
জানা গেছে,সদর উপজেলার উত্তর ইসলামপুর গ্রামের মৃত মোচন বেপারি তার সন্তানদের (ওয়ারিসদের) জন্য ৭২ শতাংশ সম্পত্তি রেখে যায়।ওই সম্পত্তির মধ্যে থেকে ওয়ারিস সৃত্রে মোচন বেপারির ছোট ছেলে শওকত আলী ১২ শতাংশ সম্পত্তির মালিক হন।এছাড়াও শওকত আলী তার মা ও ছোট বোনের সম্পত্তির অংশ থেকে ৪ শতাংশ জায়গা ক্রয় করেন।সম্প্রতি শওকত আলীর এই সম্পত্তির দিকে নজর পড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের।ওই প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা শওকত আলীর আপন বড় ভাই মোহাম্মদ আলীর সাথে যোগসাজেস করে মোহাম্মদ আলীকে দিয়ে শওকত আলীর সম্পত্তি দখল নেওয়ার জন্য সেখানে ইটের দেয়াল তুলে সীমানা প্রাচীর তুলে রেখেছে।দারিদ্র মুদি দোকানি তাতে বাঁধা দিলে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের লোকজন তাদের বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।ফলে শওকত আলী তার সম্পত্তিতে যেতে পারছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে এই সম্পত্তি রক্ষা ও দখলমুক্ত করতে গত ৭ সেপ্টেম্বর শওকত আলীর স্ত্রী মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করেন।মামলা নাম্বার-২৬৩/২২।আদালত থেকে পুলিশ দিয়ে এই সম্পত্তিতে ১৪৫ ধারা জারির নোটিশ করা হয়।কিন্তু প্রতিপক্ষ মোহাম্মদ আলী গং আদালতের নোটিশ অমান্য করে শওকত আলীর ওই সম্পত্তিতে তারা স্থাপনা নির্মাণ করছে।
জানা গেছে,মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার উত্তর ইসলামপুর গ্রামের দারিদ্র মুদিদোকান ব্যবসায়ী শওকত আলী তার মৃত পিতা মোচন বেপারির কাছ থেকে ওয়ারিশ সৃত্রে মুন্সীগঞ্জ মৌজার আর,এস খতিয়ান নং-৮৩০৮ এর ৩০৩৪ এবং ৩০৩৫ এই দুই দাগে ১২ শতাংশ, এবংআর এস খতিয়ান-১৬৯৬ এর ৩০৩৬ দাগের ক্রয়কৃত ৪ শতাংশের মালিক।
শওকত আলীর স্ত্রী মৌসুমি বলেন,এলাকার প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা দীর্ঘদিন ধরে শওকত আলীর বড় ভাই মোহাম্দ আলীর সাথে যোগসাজেস করে আমাদের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।এ নিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত বিচার-শালিশ বসে আমাদের ১৬ শতাংশ সম্পত্তি থেকে ৯ শতাংশ বুঝিয়ে দিলেও বাকী ৭ শতাংশ সম্পত্তি মোহাম্মদ আলী গং জোরপৃর্বক দখল করে রেখেছে।
এদিকে মৌসুমি আরো বলেন, আমাদের নামাজারিকৃত জায়গা দখল করে সেখানে দালাল ও ঘর নিমার্ণ করা হচ্ছে।আমাদের জায়গার অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।আমি বাঁধা দেওয়ায় তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটি আমার ও শওকতের জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছে।আমি পেয়েছি সাড়ে ১০ শতাংশ,আর আমার ছোট ভাই শওকত পেয়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ।কিন্ত শওকত ও তার স্ত্রী মৌসুমি আমাদের বিরুদ্ধে জায়গা দখলের যে কথা বলেছে তা ভিত্তিহীন।শওকত অতিরিক্ত যে সম্পত্তি পাবে দাবী করছে সেটিও মিথ্যা।
এদিকে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মো: ফরিদুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, শওকত আলীর স্ত্রী মৌসুমী মুন্সীগঞ্জ আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন।বর্তমানে ওই জায়গায় কাজ করা বন্ধ রয়েছে। বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্ব স্ব পক্ষের কাগজপত্র ও স্বাক্ষ্য প্রমানাদিসহ উভয় পক্ষের লোকজনকে আগামী ১২অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মো: আল জুনায়েদ বলেন, শওকত আলীর জায়গা সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে প্রতিপক্ষ এ ব্যাপারে শওকত আলীর স্ত্রী মৌসুমি লিখিত অভিযোগ করেছে সেটি আমি খোঁজ নিচ্ছি। অভিযোগটি দেখে সরেজমিন লোক পাঠিয়ে তার তদন্ত করা হবে।
খবর সম্পর্কে মন্তব্য করুন